একদিন আগে দেড়শ ছাড়ানো লক্ষ্য তাড়ায় যে দল জিতেছিল কোনো উইকেট না হারিয়ে, তাদের বিপক্ষে অল্প পুঁজি নিয়েও লড়াই করল নিউ জিল্যান্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পেরে উঠল না তারা। শঙ্কার মেঘ সরিয়ে শোয়েব মালিকের কার্যকর ইনিংস ও আসিফ আলির ক্যামিওতে জিতল পাকিস্তান।

শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের ম্যাচে পাকিস্তানের জয় ৫ উইকেটে। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে নিউ জিল্যান্ড করতে পারে ১৩৪ রান। জবাবে পঞ্চদশ ওভারে ৮৭ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় পাকিস্তান। সেখান থেকে মালিক ও আসিফের ২৩ বলে অবিচ্ছিন্ন ৪৮ রানের বিস্ফোরক জুটিতে ৮ বল বাকি থাকতে লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলে তারা।

ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ২২ রানে ৪ উইকেট নিয়ে জয়ের ভিতটা মূলত গড়ে দেন পেসার হারিস রউফ। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তিনিই। পাকিস্তান জিতল প্রথম দুই ম্যাচেই। আগের ম্যাচে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতকে ১০ উইকেটে হারিয়েছিল তারা। প্রথম ম্যাচেই হারল নিউ জিল্যান্ড। এই ম্যাচের আগে ঘুরে-ফিরে আসছিল গত মাসে নিউ জিল্যান্ড দলের পাকিস্তান সফর বাতিলের প্রসঙ্গ। নিরাপত্তা শঙ্কায় প্রথম ওয়ানডে শুরুর কয়েক ঘণ্টা আগে সফর বাতিল করে দেশে ফিরে যায় কিউইরা। পরে সফর বাতিল করে ইংল্যান্ড দলও। হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান রমিজ রাজা বলেছিলেন, মাঠের ক্রিকেটেই জবাব দিতে চান তারা।

শারজাহর উইকেট ছিল এদিন কিছুটা মন্থর। বল ব্যাটে আসছিল ধীরে। দুই দলের কেউ যেতে পারেননি পঞ্চাশে। নিউ জিল্যান্ডের ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ২৭। পাকিস্তানের ৩৩। টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে নিউ জিল্যান্ড। ভারতের বিপক্ষে অসাধারণ বোলিংয়ে পাকিস্তানের জয়ের নায়ক শাহিন শাহ আফ্রিদি এবারও শুরুটা করেন দুর্দান্ত। মেডেন নেন ম্যাচের প্রথম ওভারটিই। তিনটি চার মারলেও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মার্টিন গাপটিল (২০ বলে ১৭)। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে ১৪৮ কিলোমিটার গতির ডেলিভারিতে তাকে বোল্ড করে দেন রউফ।

বাঁহাতি স্পিনার ইমাদ ওয়াসিমকে ছক্কায় ওড়ানোর পরের বলেই ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ড্যারিল মিচেল (২০ বলে ২৭)। তার ইনিংসে ২টি ছক্কার পাশে চার একটি। প্রথমবার আক্রমণে এসে নিজের প্রথম বলেই জেমস নিশামকে ফিরিয়ে দেন মোহাম্মদ হাফিজ। কেন উইলিয়ামসন ও ডেভন কনওয়ে এরপর এগিয়ে নেন দলকে।

হাফিজকে পরপর চার-ছক্কা মারেন উইলিয়ামসন। শাদাবকে টানা তিনটি চার মারেন কনওয়ে। ১৩ ওভার শেষে দলের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৯০। পরের ওভারে হাসান আলির সরাসরি থ্রোয়ে উইলিয়ামসনের (২৬ বলে ২৫) রান আউটে নিউ জিল্যান্ডের পথ হারানোর শুরু। শেষ সাত ওভারে তাদের বাউন্ডারি ছিল স্রেফ তিনটি! অষ্টাদশ ওভারে তিন বলের মধ্যে কনওয়ে (২৪ বলে ২৭) ও গ্লেন ফিলিপসকে (১৫ বলে ১৩) ফিরিয়ে দেন রউফ। নিজের কোটার শেষ বলে টিম সেইফার্টকে ফিরিয়ে আফ্রিদি পান একমাত্র উইকেট। ইনিংসের শেষ বলে মিচেল স্যান্টনারকে স্লোয়ারে বোল্ড করে টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার ৪ উইকেটের স্বাদ পান রউফ। তার আগের সেরা বোলিং ছিল ২৯ রানে ৩ উইকেট।

রান তাড়ায় সতর্ক শুরু করেন ভারতের বিপক্ষে ১০৭ বলে ১৫২ রানের জুটিতে দলকে জেতানো বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। প্রথম পাঁচ ওভারে আসে ২৮ রান। পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে বাবরকে (১১ বলে ৯) বোল্ড করে দেন সাউদি। একই সঙ্গে লাসিথ মালিঙ্গা ও সাকিব আল হাসানের পর তৃতীয় বোলার হিসেবে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একশ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শ করেন তিনি। ইশ সোধিকে একটি ছক্কা হাঁকিয়ে এলবিডব্লিউ হয়ে যান ফখর জামান। মুখোমুখি প্রথম বলে ছক্কা মারেন মোহাম্মদ হাফিজও।

বাউন্ডারিতে কনওয়ের অসাধারণ ক্যাচে তিনি বিদায় নেন ১১ রান করে। পরের ওভারে রিজওয়ানকে (৩৪ বলে ৩৩) এলবিডব্লিউ করে দেন সোধি। পঞ্চদশ ওভারে তারা উইকেট হারায় আরেকটি। ট্রেন্ট বোল্টকে চার মারার পর সুইচ হিট খেলার চেষ্টায় এলবিডব্লিউ হন ইমাদ। শেষ চার ওভারে দরকার ছিল ৩৭ রান। ২০১০ সালের আসরে বার্বাডোজে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩৩ রানের পুঁজি নিয়েও ১ রানে জিতেছিল নিউ জিল্যান্ড। এবারও হয়তো তেমন কিছুর আশায় বুক বেঁধেছিল তারা।

শেষ মুহূর্তে পাকিস্তানের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া অভিজ্ঞ মালিক ও আসিফ তেমন কিছু হতে দেননি। ১৭তম ওভারে সাউদিকে পরপর দুই ছক্কা হাঁকিয়ে ব্যবধান কমান আসিফ। ওভার থেকে আসে ১৩ রান। পরের ওভারে স্যান্টনারের তিন বলের মধ্যে একটি করে চার ও ছক্কা হাঁকান মালিক। পরে বোল্টকে ছক্কায় ওড়ানোর পর ডাবল নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন আসিফ। ২০ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ২৬ রান করেন মালিক। ১২ বলে ৩ ছক্কা ও একটি চারে আসিফ করেন ২৭ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৪/৮ (গাপটিল ১৭, মিচেল ২৭, উইলিয়ামসন ২৫, নিশাম ১, কনওয়ে ২৭, ফিলিপস ১৩, সেইফার্ট ৮, স্যান্টনার ৬, সোধি ২*; আফ্রিদি ৪-১-২১-১, ইমাদ ৪-০-২৪-১, হাসান ৩-০-২৬-০, রউফ ৪-০-২২-৪, শাদাব ৩-০-১৯-০, হাফিজ ২-০-১৬-১)

পাকিস্তান: ১৮.৪ ওভারে ১৩৫/৫ (রিজওয়ান ৩৩, বাবর ৯, ফখর ১১, হাফিজ ১১, মালিক ২৬*, ইমাদ ১১, আসিফ ২৭*; স্যান্টনার ৪-০-৩৩-১, সাউদি ৪-০-২৫-১, বোল্ট ৩.৪-০-২৯-১, নিশাম ৩-০-১৮-০, সোধি ৪-০-২৮-২)

ফল: পাকিস্তান ৫ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: হারিস রউফ।